আপনার পছন্দের ভাষাতে লিঙ্কগুলি (নীল ভাষায়), একই ভাষাতে লেখা অন্য নিবন্ধে আপনাকে নির্দেশ করে। যারা নীল, ইংরেজীতে, সেই ভাষাতে লিখিত। এই ক্ষেত্রে, আপনি তিনটি ভাষা থেকেও চয়ন করতে পারেন: স্প্যানিশ, পর্তুগিজ এবং ফ্রেঞ্চ।

অন্যান্য ভাষা

("বাইবেল প্রাথমিক শিক্ষণ", নিবন্ধটি পর)

অনন্ত জীবন

আশা এবং আনন্দ, এটি আমাদের স্থিতিস্থাপকতার শক্তি

"কিন্তু, যখন এই বিষয়গুলো ঘটতে শুরু করবে, তখন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ো এবং মাথা তুলো, কারণ তোমাদের উদ্ধার লাভ করার সময় কাছে এগিয়ে এসেছে"

(লূক ২১:২৮)

এই বিধিব্যবস্থার শেষ হওয়ার আগে নাটকীয় ঘটনা বর্ণনা করার পর, এখন আমরা যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক সময়ে বাস করছি, যিশু খ্রিস্ট তার শিষ্যদেরকে "মাথা উঁচু করে" বলতে বলেছিলেন কারণ আমাদের আশা পূরণ হবে খুব কাছাকাছি।

ব্যক্তিগত সমস্যা সত্ত্বেও কীভাবে আনন্দ বজায় রাখা যায়? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে আমাদের অবশ্যই যিশু খ্রিস্টের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে: "আমাদের চারপাশে যেহেতু সাক্ষিদের এক বড়ো দল রয়েছে, তাই এসো, আমরাও সমস্ত বোঝা এবং এমন পাপ ফেলে দিই, যা সহজেই আমাদের জন্য বাধা তৈরি করে। আর এসো, আমাদের সামনে যে-দৌড় প্রতিযোগিতা রয়েছে, সেখানে আমরা ধৈর্য ধরে দৌড়াই  এবং যিনি আমাদের বিশ্বাসের মুখ্য প্রতিনিধি এবং আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস বজায় রাখতে সাহায্য করেন, সেই যিশুর প্রতি মনোযোগ স্থির রাখি। তাঁর সামনে যে-আনন্দ রাখা হয়েছিল, সেটার জন্য তিনি যাতনাদণ্ডে* মৃত্যু সহ্য করেছিলেন এবং অপমান তুচ্ছ করেছিলেন। আর তিনি ঈশ্বরের সিংহাসনের ডান দিকে বসেছেন। তাই, তাঁর কথা ভালোভাবে বিবেচনা করো, যিনি সেই লোকদের নিন্দা সহ্য করেছিলেন, যারা নিন্দা করার মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের দোষী করেছিল, যেন তোমরা ক্লান্ত হয়ে না পড় এবং হাল ছেড়ে না দাও" (হিব্রু ১২:১-৩)।

যীশু খ্রীষ্ট তার সামনে রাখা আশার আনন্দের দ্বারা সমস্যার মুখোমুখি হতে শক্তি অর্জন করেছিলেন। আমাদের অধ্যবসায়ের শক্তি দেওয়ার জন্য শক্তি আঁকানো গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের সামনে অনন্ত জীবনের প্রত্যাশার "আনন্দ" এর মাধ্যমে। যখন আমাদের সমস্যার কথা আসে, যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন যে আমাদের সেগুলোকে দিন দিন সমাধান করতে হবে: "এইজন্য আমি তোমাদের বলছি: তোমরা কী খাবে অথবা কী পান করবে বলে জীবনের বিষয়ে কিংবা কী পরবে বলে শরীরের বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন হোয়ো না। খাবারের চেয়ে জীবন আর পোশাকের চেয়ে শরীর কি আরও গুরুত্বপূর্ণ নয়?   আকাশের পাখিদের ভালো করে লক্ষ করো; এরা বোনেও না, কাটেও না কিংবা গোলা ঘরে সঞ্চয়ও করে না, তবুও তোমাদের স্বর্গীয় পিতা এদের খাবার জুগিয়ে দেন। তোমরা কি তাদের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান নও?  তোমাদের মধ্যে কেউ কি উদ্‌বিগ্ন হয়ে তার নিজের আয়ু এক মুহূর্তের জন্যও বৃদ্ধি করতে পারে?  আর তোমরা পোশাকের বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন হচ্ছ কেন? মাঠে বেড়ে ওঠা ফুলের কাছ থেকে শেখো; সেগুলো পরিশ্রমও করে না কিংবা সুতোও কাটে না;  কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি, শলোমনের যদিও অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস ছিল, তবুও তিনি এই ফুলগুলোর একটার মতোও সুসজ্জিত ছিলেন না।  মাঠে যে-ঘাস আজ আছে এবং আগামীকাল চুলোয় ফেলে দেওয়া হবে, সেগুলোকে যদি ঈশ্বর এভাবে সজ্জিত করে থাকেন, তা হলে হে অল্পবিশ্বাসীরা, তিনি কি তোমাদের আরও সজ্জিত করবেন না?  তাই, কখনো উদ্‌বিগ্ন হয়ে এমনটা বোলো না, ‘আমরা কী খাব?’ অথবা ‘আমরা কী পান করব?’ কিংবা ‘আমরা কী পরব?’  কারণ ন-যিহুদি লোকেরাই দিনরাত এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তো জানেন, এগুলো তোমাদের প্রয়োজন রয়েছে" (ম্যাথিউ ৬:২৫-৩২)। নীতিটি সহজ, আমাদের অবশ্যই আমাদের বর্তমান সমস্যাগুলোকে সমাধান করার জন্য ব্যবহার করতে হবে, শ্বরের উপর আমাদের আস্থা রেখে, আমাদের সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করতে: "অতএব, তোমরা ঈশ্বরের রাজ্যকে এবং তাঁর দৃষ্টিতে যে-বিষয়গুলো সঠিক, সেগুলো করাকে সবসময় জীবনে প্রথম স্থান দাও, তা হলে এইসমস্ত বিষয়ও তোমাদের দেওয়া হবে। ৩৪  তাই, কখনো আগামীকালের বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন হোয়ো না, কারণ আগামীকালের জন্য আগামীকালের উদ্‌বিগ্নতা রয়েছে। দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ট" (ম্যাথিউ ৬:৩৩,৩৪)। এই নীতি প্রয়োগ করলে আমাদের দৈনন্দিন সমস্যা মোকাবেলায় মানসিক বা মানসিক শক্তিকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করবে। যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন অতিরিক্ত চিন্তা করবেন না, যা আমাদের মনকে বিভ্রান্ত করতে পারে এবং আমাদের থেকে সমস্ত আধ্যাত্মিক শক্তি কেড়ে নিতে পারে (মার্ক ৪:১৮,১৯ এর সাথে তুলনা করুন)।

হিব্রু ১২:১-৩ এ লিখিত উপদেশের দিকে ফিরে, আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের মানসিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে ভবিষ্যতে আশার আনন্দের মাধ্যমে, যা পবিত্র আত্মার ফলের অংশ: "অন্যদিকে, পবিত্র শক্তির ফল হল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, ধৈর্য, দয়া, মঙ্গলভাব, বিশ্বাস, মৃদুতা, আত্মসংযম। এই বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই" (গালাতীয় ৫:২২.২3)। বাইবেলে লেখা আছে যে, যিহোবা একজন সুখী শ্বর এবং খ্রিস্টান "একটি সুখী শ্বরের সুসংবাদ" প্রচার করে (১ টিমোথি ১:১১)। যদিও এই পৃথিবী আধ্যাত্মিক অন্ধকারে রয়েছে, আমাদের অবশ্যই ভাগ করে নেওয়া সুসংবাদ দ্বারা আলোর কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে, কিন্তু আমাদের আশার আনন্দেও যে আমরা অন্যদের উপর বিকিরণ করতে চাই: "তোমরা জগতের আলো। পর্বতের উপরে অবস্থিত নগর গুপ্ত থাকতে পারে না।  লোকেরা প্রদীপ জ্বেলে পাত্র দিয়ে ঢেকে রাখে না, বরং প্রদীপদানির উপরেই রাখে আর তা ঘরের সকলকে আলো দেয়।  একইভাবে, তোমাদের আলো লোকদের সামনে উজ্জ্বল হোক, যাতে তারা তোমাদের উত্তম কাজ দেখতে পায় এবং তোমাদের পিতার গৌরব করে, যিনি স্বর্গে থাকেন" (ম্যাথিউ ৫:১৪-১৬)। অনন্ত জীবনের প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত ভিডিও এবং সেই সাথে নিবন্ধটি আশার আনন্দের এই উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে: "আনন্দ কোরো এবং উল্লসিত হোয়ো, কারণ স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর। তোমাদের আগে যে-ভাববাদীরা ছিলেন, তাদেরও তারা একইভাবে তাড়না করেছিল" (ম্যাথু ৫:১২). আসুন আমরা যিহোবার আনন্দে আমাদের দুর্গ তৈরি করি: “দু খ করবেন না, কারণ যিহোবার আনন্দই আপনার দুর্গ” (নহেমিয়া ৮:১০)।

পৃথিবীতে অনন্ত জীবন

"তোমাদের আশীর্বাদ করবেন তাই তোমরা খুব আনন্দ করবে" (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৫)

পাপের দাসত্ব থেকে মানবজাতির মুক্তির মধ্য দিয়ে অনন্ত জীবন

"কারণ ঈশ্বর এই জগতকে এতোই ভালবাসেন য়ে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে দিলেন, য়েন সেই পুত্রের ওপর য়ে কেউ বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় বরং অনন্ত জীবন লাভ করে৷ (…) য়ে কেউ পুত্রের ওপর বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবনের অধিকারী হয়; কিন্তু য়ে পুত্রকে অমান্য করে সে সেই জীবন কখনও লাভ করে না, বরং তার ওপরে ঈশ্বরের ক্রোধ থাকে৷"

(জন ৩:১৬,৩৬)

যিশু খ্রিস্ট যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন প্রায়ই অনন্ত জীবনের আশা শিখিয়েছিলেন। যাইহোক, তিনি এও শিখিয়েছিলেন যে অনন্ত জীবন কেবল বিশ্বাস দ্বারা প্রাপ্ত হবে (জন ৩:১৬,৩৬)। খ্রিস্টের বলিদানের মুক্তির মূল্য নিরাময় এবং নবজীবন এবং পুনরুত্থানের অনুমতি দেবে।

খ্রিস্টের ত্যাগের আশীর্বাদ দ্বারা মুক্তি

"মনে রেখো, তোমাদের মানবপুত্রের মতো হতে হবে, যিনি সেবা পেতে নয় বরং সেবা করতে এসেছেন, আর অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে নিজের প্রাণ উত্‌সর্গ করতে এসেছেন"

(ম্যাথু ২০:২৮)

"ইয়োব তাঁর বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা করলেন| প্রভু ইয়োবকে আবার সাফল্য দিলেন| ইয়োবের যা ছিলো, ঈশ্বর তাকে তার দ্বিগুণ দিলেন" (কাজের ৪২:১০)। মহা জনসাধারণের সমস্ত সদস্য যারা একইসাথে মহাক্লেশ থেকে বেঁচে থাকবে তাদের পক্ষে এটি একই হবে যিনি যিহোবার দ্বারা আশীর্বাদ পাবেন, যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে: "আমরা বলি যাঁরা জীবনে দুঃখ কষ্ট সহিষ্ণুতার সঙ্গে মেনে নেয় তারা ধন্য৷ তোমরা ইযোবের সহিষ্ণুতার কথা শুনেছ৷ তোমরা জান য়ে ইযোবের সমস্ত দুঃখ কষ্টের পর প্রভু তাঁকে সাহায্য করেছিলেন৷ এতে জানা যায় য়ে প্রভু করুণা ও দয়ায় পরিপূর্ণ" (জেমস ৫:১১)। খ্রিস্টের আত্মাহুতি ক্ষমা এবং মুক্তির মূল্য দেয় যা পুনরুত্থানের মাধ্যমে দেহের বিনিময়, নিরাময়।

খ্রীষ্টের ত্যাগ যা মানবতা নিরাময় করবে

"সেখানে বাস করা কোনও লোকই বলবে না যে “আমি রুগ্ন|” পাপমুক্ত লোকরাই সেখানে বাস করবে" (যিশাইয় ৩৩:২৪)

"তখন অন্ধ মানুষরা চোখে দেখতে পারবে| তাদের চোখ খুলে যাবে| তখন বধিররা শুনতে পাবে| তাদের কান খুলে যাবে| পঙ্গু মানুষরা হরিণের মতো নেচে উঠবে এবং যারা এখন কথা বলতে পারে না তারা গেযে উঠবে সুখের সঙ্গীত| বসন্তের জল যখন মরুভূমিতে প্রবাহিত হবে তখনই এসব ঘটবে| বসন্ত নেমে আসবে শুষ্ক জমিতে" (যিশাইয় ৩৫:৫,৬)।

খ্রিস্টের আত্মত্যাগ মানুষকে নতুন করে চাঙ্গা করতে দেবে

"তখন ঐ লোকটির দেহ আবার তারুণ্যে ভরে উঠবে| যুবকাবস্থায তার দেহ য়েমন ছিল, ঠিক সে রকম হয়ে যাবে" (জব ৩৩:২৫)।

খ্রিস্টের বলিদান মৃতদের পুনরুত্থানের অনুমতি দেবে

"সমাধিস্থ মৃতদের মধ্যে অনেকে পুনরায় জেগে উঠবে, তারা আবার জীবন ফিরে পাবে| তারা অমরত্ব পাবে" (ড্যানিয়েল ১২:২)।

"এদের মতো আমারও ঈশ্বরের ওপর প্রত্যাশা আছে য়ে ধার্মিক ও অধার্মিক উভয়েরই পুনরুত্থান হবে" (প্রেরিত ২৪:১৫)।

"এই কথা শুনে তোমরা অবাক হযো না, কারণ সময় আসছে, যাঁরা কবরের মধ্যে আছে তারা সবাই মানবপুত্রের রব শুনবে৷ তারপর তারা তাদের কবর থেকে বাইরে আসবে৷ যাঁরা সত্ কর্ম করেছে তারা উত্থিত হবে ও অনন্ত জীবন লাভ করবে৷ আর যাঁরা মন্দ কাজ করেছিল তারা পুনরুত্থিত হবে এবং দোষী বলে বিবেচিত হবে" (জন ৫:২৮,২৯)।

"পরে আমি এক বিরাট শ্বেত সিংহাসন ও তার ওপর যিনি বসে আছেন তাঁকে দেখলাম৷ তাঁর সামনে থেকে পৃথিবী ও আকাশ বিলুপ্ত হল এবং তাদের কোন অস্তিত্ব রইল না৷ আমি দেখলাম, ক্ষুদ্র অথবা মহান সমস্ত মৃত লোক সেই সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ পরে কয়েকটি গ্রন্থ খোলা হল এবং আরও একটি গ্রন্থ খোলা হল৷ সেই গ্রন্থটির নাম জীবন পুস্তক৷ সেই গ্রন্থগুলিতে মৃতদের প্রত্যেকের কাজের বিবরণ লিপিবদ্ধ ছিল এবং সেই অনুসারে তাদের বিচার হল৷ য়ে সব লোক সমুদ্রগর্ভে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল সমুদ্র তাদের সঁপে দিল, আর মৃত্যু ও পাতাল নিজেদের মধ্যে য়ে সব মৃত ব্যক্তি ছিল তাদের সমর্পণ করল৷ তাদের কৃতকর্ম অনুসারে তাদের বিচার হল" (প্রকাশিত বাক্য ২০:১১-১৩)।

পুনরুত্থিত অন্যায়কারীদের ভবিষ্যতের পার্থিব পরমদেশে তাদের ভাল বা খারাপ কাজের ভিত্তিতে বিচার করা হবে (পার্থিব পুনরুত্থানের প্রশাসন; স্বর্গীয় পুনরুত্থান; পার্থিব পুনরুত্থান)।

খ্রিস্টের আত্মত্যাগ বৃহত জনতাকে মহাক্লেশ থেকে বেঁচে থাকতে এবং কখনও প্রাণহীন হয়ে অনন্ত জীবন লাভ করতে দেবে

"এরপর আমি দেখলাম প্রত্যেক জাতির, প্রত্যেক বংশের এবং প্রত্যেক গোষ্ঠীর ও ভাষার অগণিত লোক সেই সিংহাসন ও মেষশাবকের সামনে এসে তারা দাঁড়িয়েছে৷ তাদের পরণে শুভ্র পোশাক এবং হাতে খেজুর পাতা৷ তারা সকলে চিত্‌কার করে বলছে, ‘যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, এই জয় সেই ঈশ্বরের ও মেষশাবকের দান৷’ সমস্ত স্বর্গদূত সিংহাসনের প্রাচীনদের ও চারজন প্রাণীর চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ তাঁরা সিংহাসনের সামনে মাথা নীচু করে প্রণাম করলেন ও ঈশ্বরের উপাসনা করতে থাকলেন৷ তাঁরা বললেন, ‘আমেন! প্রশংসা, মহিমা, প্রজ্ঞা, ধন্যবাদ, সম্মান, পরাক্রম ও ক্ষমতা যুগপর্য়ায়ের যুগে যুগে আমাদের ঈশ্বরেরই হোক্৷ আমেন!’ এরপর সেই প্রাচীনদের মধ্যে একজন আমায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘শুভ্র পোশাক পর! এই লোকরা কে, আর এরা সব কোথা থেকে এসেছে?’ আমি তাঁকে বললাম, ‘মহাশয়, আপনি জানেন৷’তিনি আমায় বললেন, ‘এরা সেই লোক যাঁরা মহানির্য়াতন সহ্য করে এসেছে; আর মেষশাবকের রক্তে নিজের পোশাক ধুয়ে শুচীশুভ্র করেছে৷ এই কারণেই এরা ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে; আর দিন রাত তাঁর মন্দিরে তাঁর উপাসনা করে চলেছে৷ যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, তিনি এদের রক্ষা করবেন৷ এরা আর কখনও ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত হবে না, এদের গায়ে রোদ বা তার প্রখর তাপও লাগবে না৷ কারণ সিংহাসনের ঠিক সামনে য়ে মেষশাবক আছেন তিনি এদের মেষপালক হবেন, তাদের জীবন জলের প্রস্রবণের কাছে নিয়ে যাবেন আর ঈশ্বর এদের সমস্ত চোখের জল মুছিয়ে দেবেন৷’" (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৭)) (সমস্ত জাতি, উপজাতি এবং ভাষার একটি বিশাল জনগোষ্ঠী মহাক্লেশ থেকে বেঁচে থাকবে)।

শ্বরের রাজ্য পৃথিবীতে শাসন করবে

"রপর আমি এক নতুন স্বর্গ ও নতুন পৃথিবী দেখলাম, কারণ প্রথম স্বর্গ ও প্রথম পৃথিবী বিলুপ্ত হয়ে গেছে; এখন সমুদ্র আর নেই৷ আমি আরো দেখলাম, সেই পবিত্র নগরী, নতুন জেরুশালেম, স্বর্গ হতে ঈশ্বরের কাছ থেকে নেমে আসছে৷ কনে য়েমন তার বরের জন্য সাজে, সেও সেইভাবে প্রস্তুত হয়েছিল৷ পরে আমি সিংহাসন থেকে এক উদাত্ত নির্ঘোষ শুনতে পেলাম, যা ঘোষণা করছে, ‘এখন মানুষের মাঝে ঈশ্বরের আবাস, তিনি তাদের সঙ্গে বাস করবেন ও তাদের ঈশ্বর হবেন৷ তিনি তাদের চোখের সব জল মুছিয়ে দেবেন৷ মৃত্যু, শোক, কান্না যন্ত্রণা আর থাকবে না, কারণ পুরানো বিষয়গুলি বিলুপ্ত হল" (প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৪) (শ্বরের রাজ্যের পার্থিব প্রশাসন ; দ্য প্রিন্স; যাজকরা; লেবীয়রা)।

"ভালো লোকেরা, তোমরা আনন্দ কর এবং প্রভুতে আনন্দলাভ কর! তোমরা সত্‌ লোকেরা আনন্দ কর!" (গীতসংহিতা ৩২:১১)

ধার্মিকরা চিরকাল বেঁচে থাকবে এবং দুষ্টরা বিনষ্ট হবে

"সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা মৃদুশীল, কারণ পৃথিবী তাদেরই হবে" (মথি ৫:৫)

"খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দুষ্ট লোকরা আর সেখানে থাকবে না| তোমরা হয়তো তাদের খুঁজবে, কিন্তু ততদিনে তারা সবাই গত হয়েছে! বিনযী লোকরা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি পাবে এবং তারা শান্তি ভোগ করবে| মন্দ লোকরা ভালো লোকদের বিরুদ্ধে মন্দ ফন্দি আঁটবে| ভালো লোকদের দিকে দাঁত কিড়মিড় করে ওরা ওদের ক্রোধ প্রকাশ করবে| কিন্তু আমাদের প্রভু ওদের দেখে দেখে হাসেন| ওদের য়ে কি হবে, তা তিনি দেখতে পান| মন্দ লোকরা তাদের তরবারি তুলে নেয, ওদের তীর তাক করে| ওরা দরিদ্র সহায়সম্বলহীন লোককে হত্যা করতে চায়| সত্‌ এবং ভালো লোকদের ওরা হত্যা করতে চায়. কিন্তু ওদের তরবারি ওদের বুকেই বিদ্ধ হবে, ওদের তীরও ভেঙ্গে যাবে| (...) কেন? কারণ মন্দ লোকরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে| কিন্তু প্রভু সত্‌ লোকদের প্রতি যত্ন নেন| (...) কিন্তু মন্দ লোকরা প্রভুর শত্রু এবং ওরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে| ওদের উপত্যকা শুকিয়ে যাবে এবং পুড়ে যাবে| ওরা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হবে| (...) সত্‌ লোকরা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত রাজ্য পাবে| সেখানে তারা চিরদিন বাস করবে| (...) ঈশ্বর যা বলেন তা কর এবং তাঁর সাহায্যের প্রতীক্ষা কর| যখন তিনি মন্দ লোকদের জোর করে তাড়িয়ে দেবেন, তখন প্রভু তোমাকেই জয়ী করবেন এবং তুমিই প্রভুর প্রতিশ্রুত রাজ্য পাবে| (...) সত্‌ এবং পবিত্র হও| শান্তিপ্রিয লোকরা অনেক উত্তরপুরুষ পাবে| কিন্তু যারা ঈশ্বরের বিধান ভাঙ্গে তারা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হবে| এবং তাদের উত্তরপুরুষদেরও দেশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে| প্রভু সত্‌ লোকেদের রক্ষা করেন| সত্‌ লোকেরা যখন সংকটে পড়ে, তখন প্রভুই তাদের আশ্রয়| প্রভু সত্‌ লোকদের সাহায্য করেন, রক্ষা করেন| সত্‌ লোকরা প্রভুতে বিশ্বাস রাখে এবং তিনি তাদের দুষ্ট লোকদের হাত থেকে রক্ষা করেন" (গীতসংহিতা ৩৭: ১০-১৫, ১৭, ২০, ২৯, ৩৪, ৩৭-৪০)।

"প্রজ্ঞা তোমাকে ধার্মিকদের পথ অনুসরণ করতে সাহায্য করবে| প্রজ্ঞা তোমাকে সত্‌ভাবে জীবনযাপনে সাহায্য করবে| সত্‌ এবং ধার্মিক লোকরা তাদের নিজেদের দেশে বসবাস করতে পারবে| সত্‌, নির্দোষ লোকরা তাদের দেশে বাস করতে পারবে| কিন্তু শয়তান লোকদের বাসভূমি তাদের হাতছাড়া হবে| যারা মিথ্যা কথা বলে এবং প্রতারণা করে তারা নিজেদের দেশ থেকে বিতাড়িত হবে| (...) সজ্জন ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করার জন্য লোকরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানায| পাপীরাও ভালো ভালো কথা বলে কিন্তু তা শুধু নিজেদের যাবতীয় দুষ্ট ইচ্ছা লোকচক্ষু থেকে আড়ালে রাখার জন্য| ধার্মিক লোকরা চির কাল সকলের কাছে স্মরণীয হয়ে থাকে| কিন্তু দুষ্ট লোকদের নাম সকলে অচিরেই ভুলে যায়" (হিতোপদেশ ২:২০-২২; ১০:৬,৭)।

যুদ্ধ বন্ধ হবে হৃদয়ে এবং সমস্ত পৃথিবীতে শান্তি থাকবে

"“তোমরা শুনেছ, এই কথা বলা হয়েছিল: ‘তুমি তোমার প্রতিবেশীকে ভালোবাসবে এবং তোমার শত্রুকে ঘৃণা করবে।’  কিন্তু, আমি তোমাদের বলছি: সবসময় তোমার শত্রুদের ভালোবেসো এবং যারা তোমাদের তাড়না করে, তাদের জন্য প্রার্থনা কোরো, যাতে তোমরা দেখাতে পার, তোমরা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান, কারণ তিনি মন্দ ও ভালো উভয়ের উপর সূর্য উদিত করেন এবং ধার্মিক ও অধার্মিক উভয়ের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। কারণ তুমি যদি শুধু সেই ব্যক্তিদের ভালোবাস, যারা তোমাকে ভালোবাসে, তা হলে তুমি কী পুরস্কারই-বা লাভ করবে? কর আদায়কারীরাও কি একই কাজ করে না? আর তুমি যদি কেবল তোমার ভাইদের সম্ভাষণ জানাও, তা হলে তুমি বিশেষ কীই-বা করছ? ন-যিহুদি ব্যক্তিরাও কি একই কাজ করে না? অতএব, তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যেমন সিদ্ধ, তেমনই তোমরাও সিদ্ধ হও” (মথি ৫:৪৩-৪৮)।

"কারণ তোমরা যদি লোকদের অপরাধ ক্ষমা কর, তা হলে তোমাদের স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন; কিন্তু, তোমরা যদি লোকদের অপরাধ ক্ষমা না কর, তা হলে তোমাদের পিতাও তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন না" (মথি ৬:১৪,১৫)।

"তখন যিশু তাকে বললেন: “তোমার খড়্গ খাপে ভরে রাখো, কারণ যারা খড়্গ ব্যবহার করে, তারা সেটার আঘাতেই মারা যাবে"" (ম্যাথু ২৬:৫২)।

"প্রভু য়ে সব ক্ষমতা সম্পন্ন কাজ করেন তা দেখ| পৃথিবীতে তিনি য়ে সব বিস্ময়কর জিনিসগুলি করেছেন সেগুলো দেখ| প্রভু এই পৃথিবীর য়ে কোন জায়গার য়ুদ্ধ থামিযে দিতে পারেন| তিনি একজন সৈনিকের ধনু ভেঙে দিতে পারেন| তিনি তাদের বল্লম চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারেন এবং তিনি তাদের রথও পুড়িয়ে দিতে পারেন" (গীতসংহিতা ৪৬:৮,৯)।

"তারপর ঈশ্বর সকল জাতির বিচারক হবেন| এবং অনেক লোকের বাদানুবাদের নিষ্পত্তি করবেন| তারা নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের সময় অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করবে| তারা তাদের তরবারি থেকে লাঙলের ফলা তৈরি করবে এবং বর্শার ফলা দিয়ে কাটারি বানাবে| এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে তরবারি ধরবে না| পরস্পরের মধ্যে লড়াই বন্ধ হবে| তারা কখনও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেবে না" (যিশাইয় ২:৪)।

“শেষের দিনগুলোতে, প্রভুর মন্দিরের পর্বতটি অন্য় আর সনস্ত পর্বতের চোযে উঁচু হয়ে উঠবে| প্রবাহের মত সেখানে অনেক লোক য়েতে থাকবে| সমস্ত জাতির লোকেরা সেখানে য়াবে| তারা বলবে, “এসো! চলো যাকোবের ঈশ্বরের মন্দিরে যাওয়া য়াক| তখন ঈশ্বর তাঁর জীবনয়াপনের শিক্ষা আমাদের দেবেন এবং আমরা তাঁকে অনুসরণ করব|” ঈশ্বরের বিধিগুলি, হ্যাঁ, প্রভুর বার্তা জেরুশালেমে সিযোন পর্বতের ওপরেই শুরু হবে এবং পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে যাবে| তখন ঈশ্বর সমগ্র জাতির বিচার হবেন| তিনি দূর দেশের বহু মানুষের যুক্তি-তর্কের সমাপ্তি ঘটবেন| ওই লোকেরা যুদ্ধের জন্য অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করবে| লোকেরা অন্যের সঙ্গে লড়াই করা বন্ধ করবে আর কখনই যুদ্ধের জন্য অনুশীলন করবে না| প্রত্যেকটি লোক তার দ্রাক্ষা এবং ডুমুর গাছের নীচে বসবে| কেউ তাদের দেখবে না| কেন? কারণ, সর্বশক্তিমান প্রভু বলেছেন এমনটাই ঘটবে!" (মীখা ৪:১-৪)।

সারা পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে খাবার থাকবে

"জমিগুলিতে য়েন প্রচুর পরিমানে ফসল হয়| পাহাড়গুলো য়েন শস্য়ে ভরে ওঠে| জমিগুলো য়েন লিবানোনের মত উর্বর হয়ে ওঠে| য়েমন করে মাঠগুলো ঘাসে ভরে যায় তেমন করে য়েন শহরগুলো মানুষে ভরে ওঠে" (গীতসংহিতা ৭২:১৬)।

"সেই সময় প্রভু তোমাদের জন্য বৃষ্টি পাঠাবেন| তোমরা জমিতে বীজ বপন করবে| এবং সেই জমি ভরে উঠবে তোমাদের খাদ্যদ্রব্য়ে| তোমাদের শস্য সংগ্রহ খুব ভালো হবে| তোমাদের গবাদি পশুসমূহ বৃহত্‌ পশুচারণ ভূমিগুলোতে চারণ করবে| তোমাদের চাহিদামত প্রচুর ফসল হবে" (যিশাইয় ৩০:২৩)।

যিশুখ্রিষ্টের অলৌকিক ঘটনা যা অনন্ত জীবনের প্রত্যাশায় বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে

“যীশু আরো অনেক কাজ করেছিলেন৷ সেগুলি যদি এক এক করে লেখা য়েত, তবে আমার ধারণা লিখতে লিখতে এত সংখ্য়ক বই হোত য়ে জগতে তা ধরতো না

“যীশু আরো অনেক কাজ করেছিলেন৷ সেগুলি যদি এক এক করে লেখা য়েত, তবে আমার ধারণা লিখতে লিখতে এত সংখ্য়ক বই হোত য়ে জগতে তা ধরতো না" (জন ২১:২৫)

যীশু খ্রীষ্ট এবং প্রথম অলৌকিক ঘটনা, তিনি জলকে ওয়াইনে পরিণত করেন: "আর তৃতীয় দিনে, গালীলের কান্না নগরে এক বিবাহভোজের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। যিশুর মা সেখানে ছিলেন।  যিশু এবং তাঁর শিষ্যেরাও সেই বিবাহভোজে নিমন্ত্রিত ছিলেন।  দ্রাক্ষারস যখন শেষ হয়ে আসছিল, তখন যিশুর মা তাঁকে বললেন: “তাদের দ্রাক্ষারস নেই।”  কিন্তু, যিশু তাঁর মাকে বললেন: “হে নারী, এতে তোমার ও আমার কী আসে-যায়? আমার সময় এখনও আসেনি।”  তাঁর মা তখন পরিবেশনকারীদের বললেন: “ইনি যা বলেন, তা-ই করো।”  সেখানে যিহুদিদের শুচিকরণের রীতি অনুসারে জল রাখার জন্য ছ-টা পাথরের জালা বসানো ছিল, যেগুলোর এক-একটার ধারণ¬ক্ষমতা ছিল প্রায় ৪৪ অথবা ৬৬ লিটার।  যিশু তাদের বললেন: “জালাগুলো জল দিয়ে পূর্ণ করো।” তখন তারা সেগুলো কানায় কানায় পূর্ণ করল।  এরপর তিনি তাদের বললেন: “এখন এখান থেকে কিছুটা তুলে ভোজাধ্যক্ষের কাছে নিয়ে যাও।” তখন তারা তা নিয়ে গেল।  ভোজাধ্যক্ষ দ্রাক্ষারসে পরিণত সেই জল একটু খেয়ে দেখলেন, কিন্তু তিনি জানতেন না, তা কোথা থেকে এসেছে (যদিও সেই পরিবেশনকারীরা জানত, যারা জল তুলে নিয়ে এসেছিল)। তা খাওয়ার পর তিনি বরকে ডাকলেন  এবং তাকে বললেন: “সকলে প্রথমে উত্তম দ্রাক্ষারস* পরিবেশন করে এবং যখন লোকেরা পান করে মাতাল হয়ে যায়, তখন নিম্নমানেরটা পরিবেশন করে। কিন্তু, তুমি তো দেখছি উত্তম দ্রাক্ষারস এখনও রেখে দিয়েছ।” এভাবে যিশু গালীলের কান্না নগরে তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ করলেন আর তাঁর মহিমা প্রকাশ করলেন। এতে তাঁর শিষ্যেরা তাঁর উপর বিশ্বাস করলেন" (জন ২:১-২২)।

যীশু খ্রীষ্ট রাজার একজন চাকরের ছেলেকে সুস্থ করেন: "পরে তিনি আবারও গালীলের কান্না নগরে এলেন, যেখানে তিনি জলকে দ্রাক্ষারসে পরিণত করেছিলেন। আর কফরনাহূমে একজন রাজকর্মচারী ছিলেন, যার ছেলে অসুস্থ ছিল।  সেই ব্যক্তি যখন শুনতে পেলেন যিশু যিহূদিয়া থেকে গালীলে এসেছেন, তখন তিনি তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে অনুরোধ করলেন, যেন তিনি এসে তার ছেলেকে সুস্থ করেন, কারণ তার ছেলে মরণাপন্ন ছিল। কিন্তু, যিশু তাকে বললেন: “তোমরা বিভিন্ন অলৌকিক ও আশ্চর্য কাজ না দেখা পর্যন্ত কোনোমতেই বিশ্বাস করবে না।”  সেই রাজকর্মচারী তাঁকে বললেন: “প্রভু, আমার ছোটো ছেলেটি মারা যাওয়ার আগেই আসুন।”  যিশু তাকে বললেন: “যাও; তোমার ছেলে সুস্থ হয়েছে।” সেই ব্যক্তি যিশুর কথায় বিশ্বাস করলেন এবং চলে গেলেন।  কিন্তু, তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তার দাসেরা এসে তাকে বলল যে, তার ছেলে সুস্থ হয়েছে।  তখন তিনি তাদের কাছে জানতে চাইলেন, কখন সে সুস্থ হয়েছে। তারা তাকে বলল: “গতকাল সপ্তম ঘণ্টায়* তার জ্বর ছেড়েছে।”  তখন ছেলেটির বাবা বুঝতে পারলেন, যিশু ঠিক সেই সময়ই তাকে বলেছিলেন: “তোমার ছেলে সুস্থ হয়েছে।” এর ফলে, তিনি এবং তার পুরো পরিবার বিশ্বাসী হয়ে উঠলেন।  যিহূদিয়া থেকে গালীলে আসার পর যিশু এই দ্বিতীয় অলৌকিক কাজ করলেন" (জন ৪:৪৬-৫৪)।

যীশু খ্রীষ্ট কফরনাহুমে একজন ভূত-দখলকারী মানুষকে সুস্থ করেন: "পরে তিনি সেখান থেকে গালীলের কফরনাহূম নগরে গেলেন। আর সেখানে বিশ্রামবারে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তারা তাঁর শিক্ষাদানের পদ্ধতি দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেল, কারণ তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে যেভাবে শিক্ষা লাভ করেছিলেন, সেই অনুযায়ী শিক্ষা দিচ্ছিলেন।  সেই সমাজগৃহে মন্দ স্বর্গদূতে পাওয়া একজন লোক ছিল, সে চিৎকার করে বলতে লাগল:  “হে নাসরতীয় যিশু, আপনি আমাদের কাছ থেকে কী চান? আপনি কি আমাদের ধ্বংস করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে, আপনি ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি।”  কিন্তু, যিশু তাকে ধমক দিয়ে বললেন: “চুপ করো, তার মধ্য থেকে বের হয়ে যাও!” তখন সেই মন্দ স্বর্গদূত লোকদের মাঝে তাকে ফেলে দিয়ে তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল, তার কোনো ক্ষতি করল না।  এতে তারা সকলে অবাক হয়ে গেল এবং একে অন্যকে বলতে লাগল: “দেখো, তাঁর কথার কেমন ক্ষমতা! তাঁর আদেশে এমনকী মন্দ স্বর্গদূতেরাও লোকদের মধ্য থেকে বের হয়ে যায়!”  আর তাঁর খবর আশেপাশের সমস্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে লাগল" (লুক ৪:৩১-৩৭)।

যিশু খ্রিস্ট একটি ভূখণ্ডে ভূত তাড়ান, এখন জর্ডান, জর্ডানের পূর্ব অংশ, লেক টাইবেরিয়াসের কাছে: "এরপর, তিনি যখন সাগরের অন্য পারে গাদারীয়দের অঞ্চলে এসে উপস্থিত হলেন, তখন মন্দ স্বর্গদূতে পাওয়া দু-জন ব্যক্তি কবরস্থান থেকে বের হয়ে তাঁর সামনে এল। তারা এতটাই হিংস্র ছিল যে, কেউই সেই পথ দিয়ে যাওয়ার সাহস পেত না।  আর দেখো! তারা চিৎকার করে বলল: “হে ঈশ্বরের পুত্র, আপনি আমাদের কাছ থেকে কী চান? আপনি কি নিরূপিত সময়ের আগেই আমাদের যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য এখানে এসেছেন?”  তাদের কাছ থেকে বেশ কিছুটা দূরে বড়ো এক পাল শূকর চরছিল।  তাই, মন্দ স্বর্গদূতেরা তাঁর কাছে বিনতি করে বলতে লাগল: “আপনি যদি আমাদের বের করে দিতে চান, তা হলে আমাদের ওই শূকরগুলোর মধ্যে প্রবেশ করার অনুমতি দিন।”  তখন তিনি তাদের বললেন: “যাও!” এতে সেই মন্দ স্বর্গদূতেরা ওই ব্যক্তিদের মধ্য থেকে বের হয়ে শূকরগুলোর মধ্যে প্রবেশ করল। আর দেখো! সেই শূকরের পাল পর্বতের খাড়া ধারের দিকে দ্রুতবেগে দৌড়ে গিয়ে সাগরে পড়ল এবং ডুবে মরল।  তা দেখে যারা শূকরের পাল চরাচ্ছিল, তারা সেখান থেকে পালিয়ে গেল এবং নগরে গিয়ে মন্দ স্বর্গদূতে পাওয়া সেই ব্যক্তিদের ঘটনা-সহ সমস্ত ঘটনা জানাল।  আর দেখো! নগরের সমস্ত লোক যিশুর সঙ্গে দেখা করতে এল এবং তাঁকে দেখতে পেয়ে তাঁর কাছে অনুরোধ করতে লাগল, যেন তিনি তাদের অঞ্চল থেকে চলে যান" (ম্যাথিউ ৮:২৮-৩৪)।

যিশু খ্রিস্ট প্রেরিত পিতরের শাশুড়িকে নিরাময় করেছিলেন: "যীশু পিতরের বাড়ীতে গিয়ে দেখলেন, পিতরের শাশুড়ীর ভীষণ জ্বর হয়েছে, আর তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন৷ যীশু তাঁর হাত স্পর্শ করা মাত্রই জ্বর ছেড়ে গেল৷ তখন তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে যীশুর সেবা করতে লাগলেন" (মথি ৮:১৪,১৫)।

যীশু খ্রীষ্ট এমন একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করেন যার প্রতিবন্ধী হাত: "আরেক বার বিশ্রামবারে তিনি সমাজগৃহে গিয়ে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। আর সেখানে এমন একজন লোক ছিল, যার ডান হাত শুকিয়ে গিয়েছিল। আর যিশু বিশ্রামবারে লোকটিকে সুস্থ করেন কি না, তা দেখার জন্য অধ্যাপকেরা ও ফরীশীরা তাঁর উপর নজর রাখছিল, যাতে কোনো-না-কোনো উপায়ে তাঁর দোষ ধরতে পারে।  কিন্তু, তিনি তাদের চিন্তা বুঝতে পারলেন। তাই, যে-লোকটির হাত শুকিয়ে গিয়েছিল, তাকে তিনি বললেন: “উঠে এসে মাঝখানে দাঁড়াও।” তাতে সে উঠে এসে মাঝখানে দাঁড়াল।  তখন যিশু তাদের বললেন: “আমি তোমাদের জিজ্ঞেস করছি, বিশ্রামবারে কী করা বৈধ? ভালো করা, না মন্দ করা? জীবন রক্ষা করা, না হত্যা করা?”  পরে তিনি চারপাশে সবার দিকে তাকালেন এবং লোকটিকে বললেন: “তোমার হাত বাড়িয়ে দাও।” তখন সে তার হাত বাড়িয়ে দিল এবং তার হাত ভালো হয়ে গেল।  কিন্তু, এতে অধ্যাপকেরা ও ফরীশীরা প্রচণ্ড খেপে গেল এবং যিশুর প্রতি কী করা যায়, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল" (লুক ৬:৬-১১)।

যীশু খ্রীষ্ট ড্রপসিতে ভোগা একজন মানুষকে সুস্থ করেন (শোথ, শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা হওয়া): "একবার তিনি বিশ্রামবারে ফরীশীদের একজন নেতার বাড়িতে খাওয়ার জন্য গেলেন আর লোকেরা তাঁকে ভালো করে লক্ষ করছিল।  আর দেখো! তাঁর সামনে এমন একজন লোক ছিল, যার শোথ রোগ হয়েছিল।  তখন যিশু ব্যবস্থাবেত্তাদের ও ফরীশীদের জিজ্ঞেস করলেন: “বিশ্রামবারে সুস্থ করা কি বৈধ, না কি বৈধ নয়?”  কিন্তু, তারা চুপ করে রইল। তখন তিনি সেই ব্যক্তির উপর হাত রেখে তাকে সুস্থ করলেন, পরে তাকে বিদায় দিলেন।  আর তিনি তাদের বললেন: “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে বিশ্রামবারে তার সন্তান কিংবা ষাঁড় কুয়োর মধ্যে পড়ে গেলে সঙ্গেসঙ্গে সেই সন্তানকে বা ষাঁড়টা কুয়ো থেকে টেনে তুলবে না?”  তারা তাঁর এই কথার কোনো উত্তর দিতে পারল না" (লুক ১৪:১-৬)।

যীশু খ্রীষ্ট একজন অন্ধকে নিরাময় করলেন: "যীশু যখন যিরীহোর কাছাকাছি পৌঁছালেন, তখন সেখানে রাস্তার ধারে বসে একজন অন্ধ ভিক্ষা করছিল৷ অনেক লোকজন যাওযার আওযাজ শুনে সেই ভিখারী ব্যাপার কি তা জিজ্ঞাসা করল৷ লোকেরা তাঁকে বলল, ‘নাসরতীয় যীশু সেখান দিয়ে যাচ্ছেন৷’ তখন সে চিত্‌কার করে বলে উঠল, ‘হে দাযূদের বংশধর যীশু, আমাকে দয়া করুন৷’ য়ে সব লোক সেই ভীড়ের সামনে ছিল তারা তাকে চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও চিত্‌কার করে বলল, ‘হে দাযূদের বংশধর আমায় দয়া করুন!’ যীশু থেমে গেলেন, তিনি সেই অন্ধকে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে বললেন৷ সেই অন্ধ তাঁর কাছে এলে পর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি চাও? তোমার জন্য আমি কি করব?’সে বলল, ‘প্রভু, আমি য়েন দেখতে পাই৷’ যীশু তাকে বললেন, ‘বেশ! তুমি চোখে দেখতে পাও, তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করল৷’ সঙ্গে সঙ্গে সে দেখতে পেল আর ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে যীশুর পেছনে পেছনে চলল৷ যাঁরা এই ঘটনা দেখল তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল" (লূক ১৮:৩৫-৪৩)।

যীশু খ্রীষ্ট দুই অন্ধ মানুষকে সুস্থ করেন: "যিশু যখন সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন দু-জন অন্ধ ব্যক্তি তাঁর পিছন পিছন যেতে লাগল এবং চিৎকার করে বলতে লাগল: “হে দায়ূদসন্তান, আমাদের প্রতি করুণা করুন।”  পরে তিনি যখন একটা বাড়িতে প্রবেশ করলেন, তখন সেই অন্ধ ব্যক্তিরা তাঁর কাছে এল এবং যিশু তাদের জিজ্ঞেস করলেন: “তোমাদের কি এই বিশ্বাস রয়েছে যে, আমি তোমাদের সুস্থ করতে পারি?” তারা উত্তরে বলল: “হ্যাঁ, প্রভু।”  তখন তিনি তাদের চোখ স্পর্শ করে বললেন: “তোমাদের বিশ্বাস অনুসারে তোমাদের প্রতি ঘটুক।”  এতে তারা দেখার ক্ষমতা পেল। তবে, যিশু তাদের এই বলে কড়াভাবে সতর্ক করে দিলেন: “দেখো, এই ঘটনার কথা যেন কেউ জানতে না পারে।”  কিন্তু, তারা বাইরে গিয়ে পুরো অঞ্চলে তাঁর খবর ছড়িয়ে দিল" (ম্যাথিউ ৯:২৭-৩১)।

যীশু খ্রীষ্ট একটি বধির মূককে সুস্থ করেন: “পরে যিশু সোর অঞ্চল থেকে সীদোন হয়ে দিকাপলির মধ্য দিয়ে গালীল সাগরের কাছে ফিরে এলেন।  সেখানে লোকেরা তাঁর কাছে এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়ে এল, যে বধির এবং স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না। তারা তার উপর হাত রাখার জন্য যিশুর কাছে বিনতি করল।  তখন যিশু তাকে ভিড়ের মধ্য থেকে দূরে একান্তে নিয়ে গেলেন। তারপর তিনি লোকটির দুই কানে নিজের আঙুল দিলেন, থুতু ফেললেন আর এরপর তার জিভ স্পর্শ করলেন।  আর তিনি স্বর্গের দিকে তাকালেন এবং গভীর শ্বাস নিয়ে তাকে বললেন: “এফ্‌ফাথা” অর্থাৎ “খুলে যাক।”  তখন তার কান খুলে গেল এবং জিভের জড়তা কেটে গেল আর সে স্পষ্টভাবে কথা বলতে লাগল।  পরে তিনি তাদের আদেশ দিলেন, যেন তারা কাউকে কিছু না বলে। কিন্তু, তিনি যতই তাদের নিষেধ করতেন, ততই তারা সেই খবর ছড়িয়ে দিত।  আসলে, তারা খুবই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল আর তাই তারা বলতে লাগল: “তাঁর সমস্ত কাজই চমৎকার। এমনকী তিনি বধিরদের শোনার এবং বোবাদের কথা বলার শক্তি দেন।””(মার্ক ১:৩১-৩৭)

যীশু খ্রীষ্ট একজন কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করেছিলেন: "একদিন এক কুষ্ঠরোগী তাঁর কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বিনীতভাবে তাঁর সাহায্য চাইল৷ সে যীশুকে বলল, ‘আপনি ইচ্ছে করলে আমাকে ভাল করে দিতে পারেন৷’ যীশু তার প্রতি মমতায় পূর্ণ হয়ে হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করে বললেন, ‘আমি তা-ই চাই, তুমি ভাল হয়ে যাও৷’ আর সঙ্গে সঙ্গে তার কুষ্ঠ রোগ তাকে ছেড়ে গেল এবং সে সুস্থ হল" (মার্ক ১:৪০-৪২)।

দশ কুষ্ঠরোগীদের নিরাময়: "তিনি জেরুসালেমের দিকে যাওয়ার সময় শমরিয়া ও গালীলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন।  আর তিনি একটা গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করছেন, এমন সময় দশ জন কুষ্ঠ রোগী তাঁকে দেখতে পেল, কিন্তু তারা দূরেই দাঁড়িয়ে থাকল।  আর তারা চিৎকার করে বলল: “হে গুরু, যিশু, আমাদের প্রতি করুণা করুন!”  তিনি তাদের দেখে বললেন: “যাজকদের কাছে গিয়ে নিজেদের দেখাও।” আর তারা পথে যেতে যেতেই শুচি হয়ে গেল।  তাদের মধ্যে একজন যখন দেখল, সে সুস্থ হয়ে গিয়েছে, তখন সে উচ্চস্বরে ঈশ্বরের গৌরব করতে করতে ফিরে এল।  আর সে যিশুর সামনে হাঁটু গেড়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে ধন্যবাদ দিল। সে একজন শমরীয় ছিল।  তখন যিশু তাকে বললেন: “দশ জনই তো সুস্থ হয়েছে! তা হলে বাকি নয় জন কোথায়?  ন-যিহুদি এই ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই কি ঈশ্বরের গৌরব করার জন্য ফিরে এল না?”  এরপর তিনি তাকে বললেন: “ওঠো, যাও; তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করেছে”" (লুক ১৭:১১-১৯)।

যিশু খ্রিস্ট একজন পক্ষাঘাতগ্রস্থকে নিরাময় করেছেন: "এরপর ইহুদীদের এক বিশেষ পর্বের সময় এলে যীশু জেরুশালেমে গেলেন৷ জেরুশালেমে মেষ ফটকের কাছে একটা পুকুর ছিল৷ ইব্রীয়তে সেই পুকুরটিকে ‘বৈথেসদা’ বলত৷ এই পুকুরটির পাঁচটি চাঁদনী ঘাট ছিল; ঘাটের সেইসব চাতালে অনেক অসুস্থ লোক শুয়ে থাকত; তাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্ধ, কেউ কেউ খোঁড়া এমনকি পঙ্গু রোগীও থাকত৷ সেখানে একজন লোক ছিল য়ে আটত্রিশ বছর ধরে রোগে ভুগছিল৷ যীশু তাকে সেখানে পড়ে থাকতে দেখলেন৷ তিনি জানতেন য়ে সে দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছে৷ তাই তাকে বললেন, ‘তুমি কি সুস্থ হতে চাও?’ সেই অসুস্থ লোকটি বলল, ‘মহাশয় আমার এমন কোন লোক নেই, জল কেঁপে ওঠার সময় য়ে আমাকে পুকুরে নামিয়ে দেবে৷ আমি ওখানে পৌঁছানোর আগেই কেউ না কেউ আমার আগে পুকুরে নেমে পড়ে৷’ যীশু তাকে বললেন, ‘ওঠ! তোমার বিছানা গুটিয়ে নাও, হেঁটে বেড়াও৷’ লোকটি সঙ্গে সঙ্গে ভাল হয়ে গেল, আর তার বিছানা তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকল৷এ ঘটনা বিশ্রামবারে ঘটল" (জন ৫:১-৯)।

যীশু খ্রীষ্ট একটি মৃগীরোগ নিরাময় করেন: “পরে তারা যখন লোকদের কাছে এলেন, তখন একজন ব্যক্তি যিশুর সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বলল:  “প্রভু, আমার ছেলের প্রতি করুণা করুন, কারণ সে মৃগী রোগী এবং খুবই অসুস্থ। সে কখনো আগুনে পড়ে যায়, আবার কখনো জলে পড়ে যায়।  আমি তাকে আপনার শিষ্যদের কাছে নিয়ে এসে¬ছিলাম, কিন্তু তারা তাকে সুস্থ করতে পারেননি।”  সেই কথা শুনে যিশু বললেন: “হে অবিশ্বাসী ও পাপী প্রজন্মের লোকেরা, আমি আর কতদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকব? কতদিন তোমাদের সহ্য করব? ছেলেটিকে এখানে আমার কাছে নিয়ে এসো।”  এরপর যিশু সেই মন্দ স্বর্গদূতকে ধমক দিলেন এবং সে ছেলেটির মধ্য থেকে বের হয়ে গেল আর সেই মুহূর্তেই ছেলেটি সুস্থ হল।  তখন শিষ্যেরা একান্তে যিশুর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: “আমরা কেন সেই মন্দ স্বর্গদূত ছাড়াতে পারলাম না?”  তিনি তাদের বললেন: “তোমাদের বিশ্বাস অল্প বলে। কারণ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে যদি একটা সরষেদানার মতোও বিশ্বাস থাকে, তা হলে তোমরা এই পর্বতকে বলবে, ‘এখান থেকে ওখানে সরে যাও’ আর সেটা সরে যাবে। তোমাদের পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব হবে না।””(ম্যাথু ১৭:১৪-২০)।

যীশু খ্রীষ্ট একটি অলৌকিক কাজ করেন এটি না জেনে: "যিশু যখন সেখানে যাচ্ছিলেন, তখন লোকেরা তাঁর উপর চাপাচাপি করে পড়তে লাগল।  সেখানে একজন মহিলা ছিল, যে ১২ বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। আর কেউই তাকে সুস্থ করতে পারেনি।  সে পিছন থেকে এসে তাঁর কাপড় স্পর্শ করল আর সঙ্গেসঙ্গে তার রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেল।  তখন যিশু বললেন: “কে আমাকে স্পর্শ করল?” সকলেই যখন অস্বীকার করছিল, তখন পিতর বললেন: “গুরু, লোকেরা আপনার চারপাশে চাপাচাপি করে আপনার উপর পড়ছে।”  কিন্তু, যিশু বললেন: “কেউ আমাকে স্পর্শ করেছে, কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, আমার মধ্য থেকে শক্তি বের হয়েছে।”  সেই মহিলা যখন বুঝতে পারল, সে কোনোমতেই এড়িয়ে যেতে পারবে না, তখন সে কাঁপতে কাঁপতে এসে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে সকলের সামনে বলল, কেন সে তাঁকে স্পর্শ করেছে এবং কীভাবে সে সঙ্গেসঙ্গে সুস্থ হয়ে গিয়েছে।  কিন্তু, যিশু তাকে বললেন: “কন্যা, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করেছে। শান্তিতে যাও।”" (লুক ৮:৪২-৪৮)।

যীশু খ্রীষ্ট দূর থেকে নিরাময় করেন: "লোকদের এইসমস্ত কথা বলে শেষ করার পর যিশু কফরনাহূমে গেলেন।  সেখানে একজন সেনাপতি ছিলেন, যার এক দাস খুবই অসুস্থ হয়ে প্রায় মরণা¬পন্ন অবস্থায় ছিল। সেই দাসকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন।  তিনি যখন যিশুর বিষয়ে শুনতে পেলেন, তখন তিনি কয়েক জন যিহুদি নেতাকে তাঁর কাছে পাঠালেন, যেন তারা তাঁকে আসার জন্য এবং তার দাসকে সুস্থ করার জন্য অনুরোধ করে।  তারা যিশুর কাছে এসে তাঁকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করে বলতে লাগল: “তাকে সাহায্য করুন, তিনি এর যোগ্য,  কারণ তিনি আমাদের জাতিকে ভালোবাসেন, এমনকী আমাদের সমাজগৃহ তৈরি করে দিয়েছেন।”  তখন যিশু তাদের সঙ্গে গেলেন। কিন্তু, তিনি বাড়ির কাছাকাছি এসেছেন, এমন সময় সেই সেনাপতি তার বন্ধুদের এই বলে পাঠালেন: “প্রভু, আপনার এত কষ্ট করার দরকার নেই, কারণ আমি এমন যোগ্য নই যে, আপনি আমার বাড়িতে আসবেন।  আর আমিও আপনার কাছে আসার জন্য নিজেকে যোগ্য বলে মনে করিনি। আপনি শুধু মুখে বলুন, তা হলেই আমার দাস সুস্থ হয়ে যাবে।  কারণ আমি কর্তৃপক্ষের অধীন এবং আমার অধীনেও সৈন্যেরা রয়েছে আর আমি যখন তাদের একজনকে বলি, ‘যাও!’ তখন সে যায়; আবার যখন আরেকজনকে বলি, ‘এসো!’ তখন সে আসে; আর যখন আমার দাসকে বলি, ‘এটা করো!’ তখন সে তা করে।”  এইসমস্ত কথা শুনে যিশু অত্যন্ত আশ্চর্য হলেন এবং যে-লোকেরা তাঁর পিছন পিছন আসছিল, তাদের দিকে ঘুরে তাকিয়ে তিনি বললেন: “আমি তোমাদের বলছি, এমনকী ইজরায়েলে কোনো ব্যক্তির মধ্যেও আমি এমন গভীর বিশ্বাস দেখিনি।”  আর যাদের পাঠানো হয়েছিল, তারা যখন বাড়িতে ফিরে এল, তখন তারা দেখল, সেই দাস সুস্থ হয়ে গিয়েছে" (লূক ৭:১-১০)।

যীশু খ্রীষ্ট ১৮ বছর ধরে একজন প্রতিবন্ধী মহিলাকে সুস্থ করেছেন: "পরে তিনি বিশ্রামবারে একটা সমাজগৃহে শিক্ষা দিচ্ছিলেন।  আর দেখো! সেখানে একজন মহিলা ছিল, যে মন্দ স্বর্গদূতের কারণে ১৮ বছর ধরে অসুস্থ ছিল; সে কুঁজো ছিল এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারত না।  সেই মহিলাকে দেখে যিশু তাকে ডেকে বললেন: “হে নারী, তুমি তোমার অসুস্থতা থেকে মুক্ত হলে।”  আর তিনি তার উপর হাত রাখলেন, এতে সে সঙ্গেসঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়াল এবং ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল।  কিন্তু, যিশু বিশ্রামবারে সুস্থ করেছেন বলে সমাজগৃহের অধ্যক্ষ অসন্তুষ্ট হল এবং লোকদের বলল: “কাজ করার জন্য ছয় দিন তো রয়েছে; তাই সেই দিনগুলোতে এসে সুস্থ হও, বিশ্রামবারে নয়।”  কিন্তু, প্রভু তাকে বললেন: “ভণ্ডেরা, তোমরা প্রত্যেকে কি বিশ্রামবারে নিজ নিজ ষাঁড় ও গর্দভ খুলে সেগুলোকে জল খাওয়াতে নিয়ে যাও না?  তা হলে এই যে নারী, যে অব্রাহামের কন্যা এবং যাকে শয়তান ১৮ বছর ধরে বন্দি করে রেখেছিল, তাকে কি বিশ্রামবারে এই বন্ধন থেকে মুক্ত করা উচিত ছিল না?”  তিনি যখন এইসমস্ত কথা বললেন, তখন তাঁর সমস্ত বিরোধী লজ্জায় পড়ে গেল। কিন্তু, লোকেরা তাঁর এইসমস্ত অপূর্ব কাজ দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হল" (লুক ১৩:১০-১৭)।

যীশু খ্রীষ্ট একজন ফিনিশীয় মহিলার কন্যাকে সুস্থ করেন: "পরে যিশু সেই স্থান ত্যাগ করে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন।  আর দেখো! সেই অঞ্চল থেকে একজন ফৈনীকীয় মহিলা এসে চিৎকার করে বলতে লাগল: “হে প্রভু, দায়ূদসন্তান, আমার প্রতি করুণা করুন। আমার মেয়েটিকে মন্দ স্বর্গদূতে পেয়েছে আর সে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।”  কিন্তু, তিনি সেই মহিলাকে কিছুই বললেন না। তাই, তাঁর শিষ্যেরা তাঁর কাছে এসে অনুরোধ করতে লাগলেন: “এ-কে বিদায় করুন, কারণ এ চিৎকার করতে করতে আমাদের পিছন পিছন আসছে।”  তিনি বললেন: “আমাকে কেবল ইজরায়েল জাতির হারানো মেষদের কাছেই পাঠানো হয়েছে।”  কিন্তু, সেই মহিলা এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল: “প্রভু, আমাকে সাহায্য করুন!”  তখন যিশু বললেন: “সন্তানদের রুটি নিয়ে কুকুরছানাদের সামনে ফেলে দেওয়া ঠিক নয়।”  এতে সেই মহিলা বলল: “প্রভু, আপনি ঠিকই বলেছেন, তবে কুকুরছানারাও তো তাদের প্রভুদের টেবিল থেকে রুটির যে-গুঁড়োগাঁড়া নীচে পড়ে, তা খেয়ে থাকে।”  এই কথা শুনে যিশু বললেন: “হে নারী, তোমার বিশ্বাস সত্যিই গভীর; তুমি যেমনটা চাও, তেমনই হোক।” আর সেই মুহূর্তেই তার মেয়ে সুস্থ হয়ে গেল" (ম্যাথিউ ১৫:২১-২৮)।

যীশু খ্রীষ্ট একটি ঝড় থামলেন: "রপর যীশু একটা নৌকাতে উঠলেন আর তার শিষ্যরা তাঁর সঙ্গে গেলেন৷ সেইহ্রদের মধ্যে হঠাত্ ভীষণ ঝড় উঠল, তাতে নৌকার উপর ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল৷ যীশু তখন ঘুমোচ্ছিলেন৷ তাইশিষ্যরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর ঘুম ভাঙ্গিয়ে বললেন, ‘প্রভু বাঁচান! আমরা য়ে ডুবে মরলাম৷’ তখন যীশু তাঁদের বললেন, ‘হে অল্প বিশ্বাসীর দল! কেন তোমরা এত ভয় পাচ্ছ?’ তারপর তিনি উঠে ঝোড়ো বাতাস ওহ্রদের ঢেউকে ধমক দিলেন, তখন সব কিছু শান্ত হল৷ এতে শিষ্যরা আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘ইনি কিরকম লোক? এঁর কথা এমন কি বাতাস ও সাগর শোনে!’" (ম্যাথু ৮:২৩-২৭)। এই অলৌকিক ঘটনাটি প্রমাণ করে যে পার্থিব পরমদেশে আর কোনও ঝড় বা বন্যা দেখা দেবে না যা বিপর্যয় ঘটাবে।

যীশু খ্রীষ্ট সমুদ্রে হাঁটছেন: "লোকদের বিদায় দেওয়ার পর, তিনি প্রার্থনা করার জন্য পর্বতে উঠলেন। যখন অন্ধকার হল, তখন তিনি সেখানে একা ছিলেন।  কিন্তু, ততক্ষণে নৌকাটা তীর থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল আর নৌকাটা ঢেউয়ের আঘাতে ভীষণভাবে দুলছিল, কারণ বাতাস তাদের প্রতিকূলে ছিল।  পরে রাতের চতুর্থ প্রহরে তিনি সাগরের উপর দিয়ে হেঁটে তাদের কাছে এলেন।  শিষ্যেরা যখন তাঁকে সাগরের উপর দিয়ে হাঁটতে দেখলেন, তখন তারা চমকে উঠলেন এবং বললেন: “এ আমরা কী দেখছি!” আর তারা ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন।  কিন্তু, তিনি সঙ্গেসঙ্গে তাদের সঙ্গে কথা বললেন: “সাহস করো! এ আমি; ভয় পেয়ো না।”  তখন পিতর তাঁকে বললেন: “প্রভু, যদি আপনিই হন, তা হলে আদেশ দিন, যেন আমি জলের উপর দিয়ে হেঁটে আপনার কাছে যেতে পারি।”  তিনি বললেন: “এসো!” তখন পিতর নৌকা থেকে নামলেন এবং জলের উপর দিয়ে হেঁটে যিশুর কাছে যেতে লাগলেন।  কিন্তু, ঝোড়ো বাতাস দেখে পিতর ভয় পেয়ে গেলেন। আর যখন তিনি ডুবে যেতে লাগলেন, তখন চিৎকার করে বলে উঠলেন: “প্রভু, আমাকে রক্ষা করুন!”  যিশু সঙ্গেসঙ্গে তাঁর হাত বাড়িয়ে পিতরকে ধরলেন এবং তাকে বললেন: “হে অল্পবিশ্বাসী, কেন সন্দেহ করলে?”  আর তারা নৌকায় ওঠার পর ঝোড়ো বাতাস থেমে গেল।  তখন যারা নৌকায় ছিলেন, তারা যিশুকে প্রণাম করে* বললেন: “আপনি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র।”" (ম্যাথু ১৪:২৩-৩৩)

মৎস্য অলৌকিক: "একবার যিশু গিনেষরৎ হ্রদের তীরে দাঁড়িয়ে লোকদের ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিক্ষা দিচ্ছিলেন আর প্রচুর লোক তাঁর উপর চাপাচাপি করে তাঁর কথা শুনছিল।  তখন তিনি দেখলেন, হ্রদের তীরে দুটো নৌকা দাঁড়িয়ে রয়েছে আর জেলেরা নৌকা থেকে নেমে তাদের জাল ধুচ্ছে।  তিনি সেগুলোর মধ্যে একটা নৌকায় উঠলেন। নৌকাটা ছিল শিমোনের। তিনি শিমোনকে নৌকাটা তীর থেকে একটু দূরে নিয়ে যেতে বললেন। এরপর তিনি নৌকায় বসে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন।  কথা শেষ করার পর তিনি শিমোনকে বললেন: “নৌকাটা গভীর জলে নিয়ে চলো এবং মাছ ধরার জন্য সেখানে তোমার জাল ফেলো।”  কিন্তু, শিমোন তাঁকে বললেন: “গুরু, আমরা সারারাত পরিশ্রম করেও কোনো মাছ ধরতে পারিনি। তবে, আপনার কথামতো আমি জাল ফেলব।”  জাল ফেলার পর মাছের এত বড়ো এক ঝাঁক ধরা পড়ল যে, এর ফলে তাদের জাল ছিঁড়ে যেতে শুরু করল।  তখন তারা অন্য নৌকায় থাকা সঙ্গীদের ইশারা করলেন, যেন তারা এসে তাদের সাহায্য করেন। আর তারা এসে দুটো নৌকাতেই এত মাছ বোঝাই করলেন যে, সেগুলো ডুবে যাওয়ার উপক্রম হল।  তা দেখে শিমোন পিতর যিশুর সামনে হাঁটু গেড়ে তাঁকে বললেন: “প্রভু, আমি আপনার কাছে থাকার যোগ্য নই, কারণ আমি পাপী।”  আসলে এত মাছ ধরা পড়েছে দেখে শিমোন এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেলেন।  সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও যোহনও অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তারা শিমোনের ব্যাবসার অংশীদার ছিলেন। কিন্তু, যিশু শিমোনকে বললেন: “ভয় কোরো না। তুমি যেমন মাছ ধরে থাক, এখন থেকে তেমনই মানুষ ধরবে।”  এরপর তারা নৌকা তীরে নিয়ে এলেন এবং সব কিছু ফেলে রেখে তাঁকে অনুসরণ করলেন" (লুক ৫:১-১১)।

যীশু খ্রীষ্ট রুটিগুলিকে বৃদ্ধি করেন: "এরপর যিশু গালীল সাগর বা তিবিরিয়া সাগরের অন্য পারে গেলেন।  আর অনেক লোক তাঁর পিছন পিছন যেতে লাগল, কারণ যিশু যে অলৌকিক উপায়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ করেছিলেন, তা তারা দেখেছিল।  তাই, যিশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে একটা পর্বতে উঠলেন এবং সেখানে বসলেন।  সেইসময় যিহুদিদের নিস্তারপর্বের উৎসব এগিয়ে আসছিল।  যিশু চোখ তুলে তাকিয়ে যখন দেখলেন অনেক লোক তাঁর কাছে আসছে, তখন তিনি ফিলিপকে বললেন: “এই লোকদের খাওয়ার জন্য আমরা কোথা থেকে রুটি কিনে নিয়ে আসব?”  তিনি আসলে ফিলিপকে পরীক্ষা করার জন্য এই কথা বললেন, কারণ যিশু জানতেন, তিনি কী করতে যাচ্ছেন।  ফিলিপ তাঁকে বললেন: “২০০ দিনারের রুটি তাদের প্রত্যেককে এমনকী অল্প অল্প করে দেওয়ার জন্যও যথেষ্ট হবে না।”  তাঁর শিষ্যদের মধ্যে একজন, শিমোন পিতরের ভাই আন্দ্রিয় তাঁকে বললেন:  “এখানে একটি ছোটো ছেলে আছে, তার কাছে পাঁচটা যবের রুটি এবং দুটো ছোটো মাছ রয়েছে। কিন্তু, এত লোকের জন্য এতে আর কীই-বা হবে?” যিশু বললেন: “লোকদের বসিয়ে দাও।” সেখানে অনেক ঘাস ছিল। আর লোকেরা সেখানে বসে পড়ল। তাদের মধ্যে পুরুষ ছিল প্রায় ৫,০০০ জন।  যিশু সেই রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন আর যারা সেখানে বসে ছিল, তাদের দিলেন; ছোটো মাছগুলো নিয়েও তিনি তা-ই করলেন আর যে যতটা চাইল, তাকে ততটা দেওয়া হল।  কিন্তু, তারা সকলে পেট ভরে খাওয়ার পর, তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন: “বেঁচে যাওয়া রুটির টুকরো সংগ্রহ করো, যেন কিছুই নষ্ট না হয়।”  তখন তারা সেগুলো সংগ্রহ করলেন আর লোকেরা সেই পাঁচটা যবের রুটি থেকে খাওয়ার পর, বেঁচে যাওয়া রুটির টুকরো দিয়ে ১২টা ঝুড়ি পূর্ণ হল। লোকেরা যিশুর এই অলৌকিক কাজ দেখে বলতে লাগল: “ইনি সত্যিই সেই ভাববাদী, যাঁর জগতে আসার কথা ছিল।”  যিশু যখন বুঝতে পারলেন, তারা তাঁকে জোর করে রাজা করার জন্য আসছে, তখন তিনি আবার একা পর্বতে চলে গেলেন" (জন ৬:১-১৫)। সারা পৃথিবীতে প্রচুর খাদ্য থাকবে (গীতসংহিতা ৭২:১৬; ইসাইয়া ৩০:২৩)।

যিশুখ্রিষ্ট বিধবার পুত্রকে পুনরুত্থিত করেছিলেন: "এর অল্প দিন পরেই যীশু নাযিন্নামে এক নগরের দিকে যাচ্ছিলেন৷ তাঁর শিষ্যরা এবং আরও অনেক লোক তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল৷ তিনি যখন সেই নগরের ফটকের কাছাকাছি এসেছেন, তখন একজন মৃত লোককে বয়ে নিয়ে যাওযা হচ্ছিল৷ সেই মৃত লোকটি ছিল তার বিধবা মায়ের একমাত্র পুত্র৷ সেই নগরের অনেক লোক সেই বিধবার সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল৷ সেই বিধবাকে দেখে তার জন্য প্রভুর খুবই দযা হল৷ তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কেঁদো না৷’ তারপর তিনি কাছে এসে শবের খাট ছুঁলেন, তখন যাঁরা মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়িয়ে পড়ল৷ এমন সময় যীশু বললেন, ‘যুবক, আমি তোমায় বলছি তুমি ওঠো৷’ তখন সেই লোকটি উঠে বসল, আর কথা বলতে শুরু করল৷ যীশু তখন তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন৷ এই দেখে সকলের মন ভয় ও ভক্তিতে পূর্ণ হল৷ তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলতে লাগল, ‘আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদীর আবির্ভাব হয়েছে৷’ তারা আরও বলতে লাগল, ‘ঈশ্বর তাঁর লোকদের সাহায্য করতে এসেছেন৷’ যীশুর বিষয়ে এই সব কথা যিহূদিযায় ও তার আশপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল" (লূক ৭:১১-১৭)।

যিশু খ্রিস্ট যাইরসের মেয়েকে পুনরুত্থিত করেছিলেন: "তিনি তখনও কথা বলছেন, এমন সময় সমাজ-গৃহের নেতার বাড়ি থেকে একজন এসে বলল, ‘আপনার মেয়ে মারা গেছে! গুরুকে আর কষ্ট দেবেন না৷’ যীশু এই কথা শুনতে পেয়ে সমাজ-গৃহের নেতাকে বললেন, ‘ভয় পেও না! কেবল বিশ্বাস কর, সে নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবে৷’ যীশু সেই বাড়িতে পৌঁছে পিতর, যাকোব, য়োহন ও মেয়েটির মা-বাবা ছাড়া আর কাউকে সেই ঘরে ঢুকতে দিলেন না৷ সেখানে অনেক লোক মেয়েটির জন্য শোক করছিল ও কাঁদছিল৷ যীশু তাদের বললেন, ‘কান্না বন্ধ কর, কারণ ও তো মরে নি, ও ঘুমোচ্ছে৷’ তাঁর কথা শুনে লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগল, কারণ তারা জানত মেয়েটি মারা গেছে৷ যীশু মেয়েটির হাত ধরে ডাক দিলেন, ‘খুকুমনি ওঠ!’ সেই মুহূর্তে তার আত্মা ফিরে এল, আর সে উঠে দাঁড়াল৷ যীশু তাদের আদেশ করলেন, ‘য়েন তাকে কিছু খেতে দেওযা হয়৷’ মেয়েটির মা বাবা খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন৷ যীশু তাদের বারণ করলেন য়েন তারা এই ঘটনার কথা কাউকে না বলে" (লূক ৮:৪৯-৫৬)।

যিশু খ্রিস্ট তার বন্ধু লাসারকে পুনরুত্থিত করেছিলেন, যিনি চার দিন আগে মারা গিয়েছিলেন: "যীশু তখনও গ্রামের মধ্যে ঢোকেন নি৷ মার্থা য়েখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তিনি সেখানেই ছিলেন৷ য়ে ইহুদীরা মরিয়মের সঙ্গে বাড়িতে ছিল ও তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল, তারা যখন দেখল য়ে মরিয়ম তাড়াতাড়ি করে উঠে বাইরে যাচ্ছেন, তখন তারাও তার পিছনে পিছনে চলল, তারা মনে করল য়ে তিনি হয়তো লাসারের কবরের কাছে যাচ্ছেন ও সেখানে গিয়ে কাঁদবেন৷ যীশু য়েখানে ছিলেন, মরিয়ম সেখানে এসে তাঁকে দেখে তাঁর পায়ের ওপর পড়ে বললেন, ‘প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন, আমার ভাই মরত না৷’ যীশু যখন দেখলেন য়ে মরিয়ম কাঁদছেন আর তার সঙ্গে য়ে সব ইহুদীরা এসেছিল তারাও কাঁদছে, তখন তিনি দুঃখিত হয়ে উঠলেন এবং অন্তরে গভীরভাবে বিচলিত হলেন৷ তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা তাকে কোথায় রেখেছ?’ তারা বললেন, ‘প্রভু, আসুন, এসে দেখুন৷’ যীশু কেঁদে ফেললেন৷ তখন সেই ইহুদীরা সকলে বলতে লাগল, ‘দেখ! উনি লাসারকে কত ভালোবাসতেন৷’ কিন্তু তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ বলল, ‘যীশু তো অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন; কেন তিনি লাসারকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেন না?’ এরপর যীশু আবার অন্তরে বিচলিত হয়ে উঠলেন৷ লাসারকে য়েখানে রাখা হয়েছিল, যীশু সেই কবরের কাছে গেলেন৷ কবরটি ছিল একটা গুহা, যার প্রবেশ পথ একটা পাথর দিয়ে ঢাকা ছিল৷ যীশু বললেন, ‘ঐ পাথরটা সরিয়ে ফেল৷’সেই মৃত ব্যক্তির বোন মার্থা বললেন, ‘প্রভু চারদিন আগে লাসারের মৃত্যু হয়েছে৷ এখন পাথর সরালে এর মধ্য থেকে দুর্গন্ধ বের হবে৷’ যীশু তাঁকে বললেন, ‘আমি কি তোমায় বলিনি, যদি বিশ্বাস কর তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পাবে?’ এরপর তারা সেই পাথরখানা সরিয়ে দিল, আর যীশু উর্দ্ধ দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘পিতা, আমি তোমায় ধন্যবাদ দিই, কারণ তুমি আমার কথা শুনেছ৷ আমি জানি তুমি সব সময়ই আমার কথা শুনে থাক৷ কিন্তু আমার চারপাশে যাঁরা দাঁড়িয়ে আছে তাদের জন্য আমি একথা বলছি, য়েন তারা বিশ্বাস করে য়ে তুমি আমায় পাঠিয়েছ৷’ এই কথা বলার পর যীশু জোর গলায় ডাকলেন, ‘লাসার বেরিয়ে এস!’ মৃত লাসার সেই কবর থেকে বাইরে এল৷ তার হাতপা টুকরো কাপড় দিয়ে তখনও বাঁধা ছিল আর তার মুখের ওপর একখানা কাপড় জড়ানো ছিল৷যীশু তখন তাদের বললেন, ‘বাঁধন খুলে দাও এবং ওকে য়েতে দাও৷" (জন ১১:৩০-৪৪)।

শেষ অলৌকিক মৎস্য (খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের কিছুক্ষণ পরে): "পরে সকাল হয়ে আসছে, এমন সময় যিশু তীরে এসে দাঁড়ালেন, কিন্তু শিষ্যেরা বুঝতে পারলেন না যে, তিনি যিশু।  যিশু তাদের বললেন: “বন্ধুরা, তোমাদের কাছে কি কোনো খাবার আছে?” তারা উত্তর দিলেন: “না!”  তিনি তাদের বললেন: “তোমাদের নৌকার ডান দিকে জাল ফেলো, তা হলে তোমরা কিছু মাছ পাবে।” তখন তারা জাল ফেললেন আর এত মাছ ধরা পড়ল যে, তারা জালটা টেনে তুলতে পারলেন না।  তখন যিশু যাকে ভালোবাসতেন, সেই শিষ্য পিতরকে বললেন: “উনি প্রভু!” পিতর যখন শুনলেন যে, উনি প্রভু, তখন তিনি তার কাপড় গায়ে জড়ালেন কারণ তিনি উলঙ্গ ছিলেন আর সাগরে ঝাঁপ দিলেন।  কিন্তু, অন্য শিষ্যেরা ছোটো নৌকায় করে মাছে পূর্ণ জালটা টানতে টানতে তীরের দিকে এগিয়ে গেলেন, কারণ তারা তীর থেকে বেশি দূরে ছিলেন না, কেবল প্রায় ৯০ মিটার দূরে ছিলেন" (জন ২১:৪-৮)।

যিশু খ্রিস্ট আরও অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তারা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে, উত্সাহিত করে এবং পৃথিবীতে যে-আশীর্বাদ পাবে, তার এক ঝলক রয়েছে। প্রেরিত যোহনের লিখিত বাক্যগুলি পৃথিবীতে কী ঘটবে তার গ্যারান্টি হিসাবে যিশু খ্রিস্ট যে বিস্ময়কর অলৌকিক চিহ্ন করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেছেন: “যীশু আরো অনেক কাজ করেছিলেন৷ সেগুলি যদি এক এক করে লেখা য়েত, তবে আমার ধারণা লিখতে লিখতে এত সংখ্য়ক বই হোত য়ে জগতে তা ধরতো না" (জন ২১:২৫)।

বাইবেল প্রাথমিক শিক্ষণ

• ঈশ্বরের একটি নাম আছে: যিহোবা (The Revealed Name)। একা আমরা কেবল যিহোবাকে উপাসনা করতে হবে। আমাদের সমস্ত প্রাণশক্তি দিয়ে তাঁকে ভালবাসতে হবে: "‘আমাদের প্রভু ও ঈশ্বর! তুমি মহিমা, সম্মান ও পরাক্রম পাবার য়োগ্য, কারণ তুমি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছ৷ তোমার ইচ্ছাতেই সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে ও সব কিছুর অস্তিত্ব আছে" (ঈশা ৪২:৮, প্রকাশিত বাক্য ৪:১১, মথি ২২:৩৭) (Worship Jehovah; In Congregation)। ঈশ্বর একটি ত্রিত্ব নয়।

• ঈসা মসিহ একমাত্র ঈশ্বরের পুত্র, এই অর্থে যে তিনি ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র যিনি ঈশ্বরের দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেছেন: ""তিনি তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘মানবপুত্রকে?’ এবিষয়ে লোকে কি বলে? তাঁরা বললেন, ‘কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা য়োহন, কেউ বলে এলীয়,আবার কেউ বলে আপনি যিরমিয়বা ভাববাদীদের মধ্যে কেউ একজন হবেন৷’ তিনি তাঁদের বললেন, ‘কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?’ এর উত্তরে শিমোন পিতর বললেন, ‘আপনি সেইমশীহ (খ্রীষ্ট), জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র৷’ এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, ‘য়োনার ছেলে শিমোন, তুমি ধন্য, কোনো মানুষের কাছ থেকে একথা তুমি জাননি, কিন্তু আমার স্বর্গের পিতা একথা তোমায় জানিয়েছেন" (মথি ১৬:১৩-১৭, যোহন ১:১-৩) (Jesus Christ the Only Path; The King Jesus Christ)। যিশু খ্রিস্ট সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নয় এবং তিনি ত্রিত্বের অংশ নন।

• পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি। তিনি একজন ব্যক্তি নন: "তাঁরা তাঁদের সামনে আগুনের শিখার মতো কিছু দেখতে পেলেন, সেই শিখাগুলি তাদের উপর ছড়িয়ে পড়ল ও পৃথক পৃথক ভাবে তাঁদের প্রত্যেকের উপর বসল" (প্রেরিত ২: ৩। পবিত্র আত্মা একটি ত্রিত্বের অংশ নয়।

• বাইবেল হল ঈশ্বরের বাক্য: "সমস্ত শাস্ত্রই ঈশ্বর দিয়েছেন এবং অনুয়োগ, সংশোধন ও ন্যায়পরায়ণ জীবনযাপনের জন্য প্রতিটি বাক্যই সঠিক নির্দেশ দিতে পারে৷য়েন তার দ্বারা ঈশ্বরের লোক পরিপক্ক ও সমস্ত সত্ কর্মের জন্য সুসজ্জিত হয়" (২ তীমথিয় ৩:১৬,১৭)। আমাদের অবশ্যই এটি পড়তে হবে, অধ্যয়ন করতে হবে এবং আমাদের জীবনে এটি প্রয়োগ করতে হবে (গীতসংহিতা ১:১-৩) (Read The Bible Daily)।

• এটা খ্রীষ্টের বলিদান যা পাপের ক্ষমা দেয়: "কারণ ঈশ্বর এই জগতকে এতোই ভালবাসেন য়ে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে দিলেন, য়েন সেই পুত্রের ওপর য়ে কেউ বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় বরং অনন্ত জীবন লাভ করে" (জন ৩:১৬, ম্যাথু ২০:২৮) (মনে রাখা যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মৃতি (স্লাইডশো))।

• ঈশ্বরের রাজ্য ১৯১৪ সালে স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বর্গীয় সরকার, রাজা যীশু খ্রীষ্টের ১৪৪০০০ রাজা এবং পুরোহিত (নতুন জেরুজালেম), খ্রীষ্টের নববধূ গঠিত। ঈশ্বরের এই স্বর্গীয় সরকার মহাক্লেশের সময় বর্তমান মানব শাসনকে শেষ করে দেবে এবং পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে:  “চতুর্থ রাজ্যের রাজাদের সময় স্বর্গের ঈশ্বর আর একটি রাজ্য স্থাপন করবেন| এই রাজ্যটি চির কালের জন্য থাকবে| এটি ধ্বংস হবে না এবং এটি সেই জাতীয় রাজ্য হবে না য়েটা একটি জাতি থেকে আর একটিকে দেওয়া হবে| এই রাজ্য অন্য সমস্ত রাজ্যকে ধ্বংস করে ফেলবে কিন্তু নিজে চিরস্থায়ী হবে|" (প্রকাশিত বাক্য 1২: ৭-1২, ২১:১-৮, মথি ৬:৯,১০, দানিয়েল ২:৪৪) (The End of Patriotism; The King Jesus Christ; The Earthly Administration of the Kingdom of God)।

• মৃত্যু জীবনের বিপরীত। আত্মা মরে এবং আত্মা (জীবনযাত্রা) অদৃশ্য হয়ে যায়: "সাহায্যের জন্য তোমরা নেতাদের ওপর নির্ভর কর না| লোকেদের বিশ্বাস কর না| কেন? কারণ লোকে তোমাকে বাঁচাতে পারে না| মানুষ মরে কবরে চলে যায়| তখন তাদের সাহায্যের সব পরিকল্পনা শেষ হয়ে যায়" (গীতসংহিতা ১৪৬:৩,৪, উপদেশক ৩:১৯,২০; ৯:৫,১০)।

• ন্যায় ও অন্যায়কারীদের পুনরুত্থান হবে: "পরে আমি এক বিরাট শ্বেত সিংহাসন ও তার ওপর যিনি বসে আছেন তাঁকে দেখলাম৷ তাঁর সামনে থেকে পৃথিবী ও আকাশ বিলুপ্ত হল এবং তাদের কোন অস্তিত্ব রইল না৷ আমি দেখলাম, ক্ষুদ্র অথবা মহান সমস্ত মৃত লোক সেই সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ পরে কয়েকটি গ্রন্থ খোলা হল এবং আরও একটি গ্রন্থ খোলা হল৷ সেই গ্রন্থটির নাম জীবন পুস্তক৷ সেই গ্রন্থগুলিতে মৃতদের প্রত্যেকের কাজের বিবরণ লিপিবদ্ধ ছিল এবং সেই অনুসারে তাদের বিচার হল৷য়ে সব লোক সমুদ্রগর্ভে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল সমুদ্র তাদের সঁপে দিল, আর মৃত্যু ও পাতাল নিজেদের মধ্যে য়ে সব মৃত ব্যক্তি ছিল তাদের সমর্পণ করল৷ তাদের কৃতকর্ম অনুসারে তাদের বিচার হল" (যোহন ৫:২8,২9, প্রেরিত ২৪:১৫; প্রকাশিত বাক্য ২0:১১-১৩) (The Earthly Resurrection; The Administration of the Earthly Resurrection; The Judgment of the unrighteous)।

• মাত্র ১৪৪০০০ মানুষ যিশু খ্রিস্টের সাথে স্বর্গে যাবে। প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৭ পদে উল্লেখ করা প্রচুর জনসাধারণই সেই মহাক্লেশকে বেঁচে থাকবে এবং পৃথিবীর পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকবে: "এরপর আমি শুনলাম কত লোকের কপালে চিহ্ন দেওয়া হল৷ মোট একলক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার লোক৷ তারা ছিল সমস্ত ইস্রায়েল গোষ্ঠীর ও জাতির৷(...) এরপর আমি দেখলাম প্রত্যেক জাতির, প্রত্যেক বংশের এবং প্রত্যেক গোষ্ঠীর ও ভাষার অগণিত লোক সেই সিংহাসন ও মেষশাবকের সামনে এসে তারা দাঁড়িয়েছে৷ তাদের পরণে শুভ্র পোশাক এবং হাতে খেজুর পাতা৷(...) আমি তাঁকে বললাম, ‘মহাশয়, আপনি জানেন৷’তিনি আমায় বললেন, ‘এরা সেই লোক যাঁরা মহানির্য়াতন সহ্য করে এসেছে; আর মেষশাবকের রক্তে নিজের পোশাক ধুয়ে শুচীশুভ্র করেছে" (প্রকাশিত বাক্য ৭:৩-৮; ১৪:১-৫; ৭:৯-১৭) (The Heavenly Resurrection (144000); The Great Crowd)

• আমরা সেই শেষ দিনগুলো বেঁচে আছি যা মহাক্লেশের শেষ হবে (ম্যাথুজ ২৪,২৫, মার্ক ১৩, লুক ২১, প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-২১)। খ্রীষ্টের উপস্থিতি ১৯১৪ সাল থেকে অদৃশ্যভাবে শুরু হয়েছে এবং এক হাজার বছরের শেষের দিকে শেষ হবে: "যীশু যখন জৈতুন পর্বতমালার ওপর বসেছিলেন, তখন তাঁর শিষ্যরা একান্তে তাঁর কাছে এসে তাঁকে বললেন, ‘আমাদের বলুন, কখন এসব ঘটবে, আর আপনার আসার এবং এযুগের শেষ পরিণতির সময় জানার চিহ্নই বা কি হবে?’" (ম্যাথু ২৪:৩) (The Great Tribulation; The King Jesus Christ)।

• নন্দনকানন পৃথিবী হবে: "পরে আমি সিংহাসন থেকে এক উদাত্ত নির্ঘোষ শুনতে পেলাম, যা ঘোষণা করছে, ‘এখন মানুষের মাঝে ঈশ্বরের আবাস, তিনি তাদের সঙ্গে বাস করবেন ও তাদের ঈশ্বর হবেন৷তিনি তাদের চোখের সব জল মুছিয়ে দেবেন৷ মৃত্যু, শোক, কান্না যন্ত্রণা আর থাকবে না, কারণ পুরানো বিষয়গুলি বিলুপ্ত হল" (ইশাইয়ার ১১,৩৫,৬৫, প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৫) (The Release)।

• দেবতা অনুমতি দেওয়া দুর্ভোগ। এটা শয়তানের চ্যালেঞ্জের উত্তর দেয় যে, যিহোবার সার্বভৌমত্বের বৈধতা (আদিপুস্তক ৩:১-৬)। এবং মানবজাতির অখণ্ডতার বিষয়ে দিয়াবলের অভিযোগের জবাব দিতেও (কাজের ১:৭-১২; ২:১-৬)। এটা যন্ত্রণা সৃষ্টিকারী ঈশ্বর নয় (জেমস ১:১৩)। ভোগান্তি চারটি প্রধান কারণের ফল: শয়তান দুঃখকষ্টের কারণ হতে পারে (কিন্তু সর্বদা নয়) (কাজের ১:৭-১২; ২:১-৬) (Satan Hurled)। দুঃখ হচ্ছে আদমের পাপের বংশধরদের আমাদের সাধারণ রাজ্যের ফল যা আমাদের বয়স, অসুস্থতা ও মৃত্যু নিয়ে আসে (রোমীয় ৫:১২; ৬:২৩)। আদম থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থা (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৫, রোমীয় ৭:১৯) এর কারণে খারাপ মানুষের সিদ্ধান্ত (আমাদের অংশ বা অন্যান্য মানুষের মত) ক্ষতি হতে পারে। দুঃখ হচ্ছে "অপ্রত্যাশিত সময় এবং ঘটনা" ভুল সময়ে ভুল জায়গায় হচ্ছে (উপদেশক ৯:১১)। ডেসটিনি বাইবেলের শিক্ষণ নয়, আমরা ভাল বা মন্দ কাজ করার জন্য "নিয়তি" নই, কিন্তু স্বাধীন ইচ্ছার ভিত্তিতে আমরা "ভাল" বা "মন্দ" (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৫)।

• আমাদের অবশ্যই বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে এবং বাইবেলে যা লেখা আছে তা অনুযায়ী কাজ করে ঈশ্বরের রাজ্যের স্বার্থ পরিবেশন করতে হবে (ম্যাথুজ ২৮:১৯,২০) (Baptism)। ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষে এই দৃঢ় অবস্থানটি সর্বদা সুসমাচার প্রচারের মাধ্যমে প্রকাশ্যে প্রদর্শিত হয় (ম্যাথুজ ২৪:১৪) (Good News)।

বাইবেল দ্বারা নিষিদ্ধ

মারাত্মক ঘৃণা নিষিদ্ধ: "যে ব্যক্তি তার ভাইকে ঘৃণা করে সেটি হত্যাকাণ্ড, এবং আপনি জানেন যে কোন খুনীকে অনন্তজীবন তার মধ্যে থাকে না" (১ যোহন ৩:১৫)। এটা ধর্ম বা স্বদেশের জন্য হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়: "তখন যিশু তাঁকে বললেন," তোমার তরোয়ালটি তার জায়গায় রাখো, কারণ যারা তরোয়াল নেয় তারা তরোয়ালের দ্বারা ধ্বংস হয়ে যাবে "(ম্যাথু ২৬:৫২) (End of Patriotism)।
চুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে: "চোর আর চুরি করে না" (এফিসিয়ানস ৪:২৮)।
মিথ্যা বলা নিষিদ্ধ: "একে অপরের সাথে মিথ্যা কথা বলুন না" (কলসীয় ৩:৯)।

অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা:

"‘তাই আমার বিচার এই য়ে অইহুদীদের মধ্য থেকে যাঁরা ঈশ্বরের দিকে ফিরেছে আমরা তাদের কষ্ট দেব না৷এর পরিবর্তে আমরা তাদের পত্র লিখে এই কথা জানাবো৷তারা য়েন প্রতিমা সংক্রান্ত কোন অশুচি খাদ্য না খায়, য়ৌন পাপ কার্য় থেকে বিরত থাকে, গলা টিপে মারা কোন প্রাণীর মাংস না খায় বা রক্ত আস্বাদন না করে" (पশিষ্যচরিত ১৫:১৯,২০)।

মূর্তি দ্বারা দাগ হয়েছে যে জিনিস:এইগুলি "জিনিসগুলি" ধর্মীয় অভ্যাস সম্পর্কিত, পৌত্তলিক ছুটির উদযাপন। হত্যা বা মাংস খাওয়ার আগে এটি ধর্মীয় অভ্যাস হতে পারে: "বিবেকের প্রশ্ন না তুলে য়ে কোন মাংস বাজারে বিক্রি হয় তা খাও৷কারণ শাস্ত্রে য়েমন লেখা আছে: ‘পৃথিবী ও তার মধ্যেকার সব কিছুই প্রভুর৷’যদি কোন অবিশ্বাসী ভাই তোমাকে নিমন্ত্রণ করে; আর যদি তুমি নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে চাও, তবে নিজের বিবেকের কাছে কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করে য়ে কোন খাদ্যদ্রব্য পরিবেশন করে সামনে রাখা হয়, তা খেও৷কিন্তু কেউ যদি বলে য়ে, ‘এ হল প্রতিমার প্রসাদ’ তবে য়ে জানালো, তার কথা চিন্তা করে ও বিবেকের কথা মনে রেখে, তা খেও না৷আমি কোন ব্যক্তির নিজের বিবেকের নয়, কিন্তু অপর ব্যক্তির বিবেকের বিষয় বলছি৷ আমার স্বাধীনতা কেন অপরের বিবেকের দ্বারা বিচারিত হবে? যদি আমি ধন্যবাদ জানিয়ে খাই, তাহলে য়ে বিষয়ের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছি সে বিষয়ে আমার সমালোচনা হবে এ আমি চাই না" (করিন্থীয় ১ ১০:২৫-৩০)৷

"তোমরা অবিশ্বাসীদের থেকে আলাদা, তাই তাদের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করো না; কারণ ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে কোন য়োগ থাকতে পারে না৷ অন্ধকারের সাথে আলোর কি কোন য়োগায়োগ থাকতে পারে? খ্রীষ্ট এবং দিয়াবলের মধ্যে কি কোন সম্পর্ক থাকতে পারে? অবিশ্বাসীর সাথে বিশ্বাসীরই বা কি সম্পর্ক? ঈশ্বরের মন্দিরের সাথে প্রতিমারই বা কি সম্পর্ক? কারণ আমরাই তো জীবন্ত ঈশ্বরের মন্দির; য়েমন ঈশ্বর বলেছেন:‘আমি তাদের মধ্যে বাস করব এবং তাদের মধ্যে যাতায়াত করব; আমি তাদের ঈশ্বর হবো ও তারা আমার লোক হবে৷প্রভু বলেন, ‘তোমরা তাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে এস, তাদের থেকে পৃথক হও এবং অশুচি জিনিস স্পর্শ করো না, তাহলে আমি তোমাদের গ্রহণ করব৷‘আমি তোমাদের পিতা হব ও তোমরা আমার পুত্র কন্যা হবে৷’ একথা সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন" (করিন্থীয় ২ ৬:১৪-১৮)৷

মূর্তিপূজা অনুশীলন করবেন না। ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সমস্ত মূর্তি বা চিত্র, ক্রস, মূর্তি ধ্বংস করা প্রয়োজন (ম্যাথুজ ৭:১৩-২৩)। জাদু অনুশীলন না। ম্যাজিক বস্তু ধ্বংস করুন (প্রেরিত ১৯:১৯,২০)।

সিনেমা বা অশ্লীল বা হিংসাত্মক এবং অবমাননাকর চিত্র দেখতে না। জুয়া, ড্রাগ ব্যবহার, যেমন মারিজুয়ানা, betel, তামাক, অতিরিক্ত মদ, orgies থেকে বিরত থাকুন: " ভাই ও বোনেরা আমার মিনতি এই, ঈশ্বর আমাদের প্রতি দয়া করেছেন বলে তোমাদের জীবন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবিত বলিরূপে উত্‌সর্গ কর, তা তাঁর কাছে পবিত্র প্রীতিজনক হোক৷ ঈশ্বরের উপাসনা করার জন্য তোমাদের কাছে এ এক আত্মিক উপায়" (রোমীয় ১২:১; মথি ৫:২৫-২৭; গীতসংহিতা ১১:৫)।

যৌন অনৈতিকতা: ব্যভিচার, অবিবাহিত লিঙ্গ (পুরুষ / মহিলা), পুরুষ এবং মহিলা সমকামীতা: "তোমরা কি জান না যে অন্যায়কারীরা ঈশ্বরের রাজ্যের উত্তরাধিকারী হবে না?" বিপথগামী হও না। "ব্যভিচারীদের, না মূর্তিপূজাকারী, না ব্যভিচারিণীও না, পুরুষরাও অপ্রাসঙ্গিক উদ্দেশ্যে নয়, পুরুষরাও ঘুমাচ্ছে না। পুরুষদের সাথে, চোর, লোভী, মাতাল, অপমানকারী, কোনও চাঁদাবাজিকারীরা ঈশ্বরের রাজ্যের উত্তরাধিকারী হবে না" (করিন্থীয় ১ ৬:৯,১০)। "বিবাহ বন্ধনকে তোমরা সবাই অবশ্য মর্য়াদা দেবে, যাতে দুটি মানুষের মধ্যে পবিত্র সম্পর্ক রক্ষিত হয়, কারণ যাঁরা ব্যভিচারী ও লম্পট, ঈশ্বর তাদের বিচার করবেন" (হিব্রুদের কাছে পত্র ১৩:৪)৷

বাইবেল বহুবিবাহকে নিন্দা জানিয়েছে, এই অবস্থায় যে কেউই ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চায় সে অবশ্যই তার প্রথম স্ত্রীর সাথেই বিয়ে করে তার অবস্থা নিয়মিত করে দিতে হবে (১ টিমোথি ৩:২ "একের স্বামী নারী ")। হস্তমৈথুন নিষিদ্ধ করা হয়: "তাই তোমাদের জাগতিক স্বভাব থেকে সব মন্দ বিষয় দূর করে দাও৷ য়েমন: য়ৌনপাপ, অপবিত্রতা, অশুচি চিন্তার বশবর্তী হওয়া, মন্দ বিষয়ের লালসা করা এবং লোভ৷ লোভ এক প্রকার প্রতিমা পূজা" (কলসীয় ৩:৫)৷

এটা রক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয় : "য়ে মাংসের মধ্যে সেই প্রাণীর প্রাণ (রক্ত) আছে সেই মাংস কখনও খাবে না|" (আদিপুস্তক ৯:৪) (The Sacred Blood; The Sacred Life)।

বাইবেল দ্বারা নিন্দিত সমস্ত জিনিস এই বাইবেল অধ্যয়ন মধ্যে বানান করা হয় না। যে খ্রিস্টান পরিপক্বতা এবং বাইবেলের নীতিগুলির একটি ভাল জ্ঞান পৌঁছেছেন, তিনি "ভাল" এবং "মন্দ" এর মধ্যে পার্থক্যটি জানেন, এমনকি যদি এটি সরাসরি বাইবেলে লিখিত না হয়: "কিন্তু শক্ত খাবার তাদেরই জন্য যাঁরা শিশুর মতো আচরণ করে না এবং আত্মায় পরিপক্ক৷ নিজেদের শিক্ষা দিয়ে ও তা অভ্য়াস করে তারা ভাল মন্দের বিচার করতে শিখেছে" (হিব্রুদের কাছে পত্র ৫:১৪) (SPIRITUAL MATURITY)

Share this page